রোগ নিরাময়ে খেজুরের গুরুত্ব সমূহ !!!

খেজুরের পুষ্টিগুণ ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
র. ম. আওরঙ্গজেব : খেজুর অতি পরিচিত গাছ। পাম পরিবারবুক্ত এ গাছ লম্বায় প্রায় ২০-২৫ ফুট হয়। এর আদি নিবাস ভারত উপমহাদেশে। বাংলাদেশের খুলনা, যশোর, বরিশাল, ফরিদপুর, মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ে  এ গাছ বেশি এবং সর্বত্রই কম, বেশি জন্মে থাকে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে এদেশে ৬৮.১০ বর্গ কিলোমিটার (২৬.২৯) বর্গ মাইল) জমিতে খেজুর গাছ জন্মে। দেশে খেজুর গাছের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার যা হতে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন রস উৎপাদন সম্ভব। যার মূল্য ৩৩৩.৮১ মিলিয়ন টাকা।
খেজুর গাছ স্ত্রী, পুরুষ উভয়ই হয়ে থাকে। স্ত্রী গাছে ফুল ও ফল হয়। ফল প্রথমে সবুজ, পাকলে খয়েরি লাল রঙের হয়ে থাকে। শীতের শেষে ফুল ধরে ও গ্রীষ্মে ফল পরিপক্ক হয়। এদেশের খেজুর বিস্বাদ হয়। আমরা রোজার ইফতারসহ সাধারণত যে খেজুর খাইও তা মধ্যপ্রাচ্য হতে আসে। শীতকালে সারাদেশে শীতের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আর শীতের পিঠা খেজুর রসের হলেতো এর মজাই আলাদা। পূর্ণ বয়স্ক একটি খেজুর গাছ থেকে প্রতিদিন ২-৩ লিটার রস পাওয়া যায়। এজন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় গাছের উপরের দিকে কেটে ফেলতে হয়। কাটা অংশের নিচে বাঁশ বা গাছের খিল লাগাগনো হয় যার মাধ্যমে ফোঁটা ফোঁটা রস গাছে বাঁধা হাড়িতে পড়ে। সারা রাতে হাঁড়ি রসে ভর্তি হয়। খুব সকালে হাঁড়ি নামানো হয়। এভাবে রস আহরণের কাজ যারা করে তাদেরকে বলা হয় গাছী। গাছীরা কাঠ, দা ও গাছী দা নামে দু’রকম দা ব্যবহার করে থাকেন। শীতকালে গাছীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
খেজুরের রয়েছে অনেক উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ। ইসলামে খেজুরের মর্যাদা অন্যান্য ফলের চেয়ে বেশি। পবিত্র কোরআন শরীফে ২৬ বার খেজুরের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফ প্রথম লেখা হয়েছিল খেজুরের পাতায়। রাসূলুল্লাহ হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর প্রিয় ফল ছিল খেজুর। তিনি প্রতিদিন সকালে ৭টি খেজুর খেয়ে নাস্তা করতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রমযানের রোযায় সকল মুমিন মুসলমানদেরকে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতে বলতেন। একবার তিনি বলেছিলেন কারো বাড়িতে যদি অল্প কিছু খেজুর থাকে তবে তাকে গরীব বলা যাবে না। পবিত্র কোরআন ও রাসূলুল্লাহর (সাঃ) হাদীস থেকে খেজুরের গুণের কথা জানা যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে ২৭৫ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৭৩.১৫ ভাগ শর্করা, ৭.৫ ভাগ আঁশ। এছাড়া আছে লৌহ, দস্তা, ফসফরাস, ক্যালসিয়ামসহ প্রয়োজনীয় সব খনিজ উপাদান, ১৮টি এমাইনো এসিড ও খাদ্যপ্রাণ।
বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা রয়েছে। খেজুর খুব সুস্বাদু ও ক্ষুধা নিবারক। এর শিকড় হতে ওষুধ হয়। গাছের মাথার নরম অংশ মাথী যা কৃমি ও মূত্রনালীর প্রদাহে কার্যকরী। হৃদরোগ, বিষিক্রিয়া, পাতলা পায়খানা, গলাব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, ঠা-া, কফ, নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত। এছাড়া খেজুর শারীরিক, মানসিক, হজম, যৌন ও রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। খেজুরের বীজ, আঠা ও গাছের পাতার রয়েছে অনেক ব্যবহার। পুরাতন গাছে চিলে পাতা নামক পরগাছা হয় যা ভেষজ গুণ সম্পন্ন। গাছের কা- ঘরের খুঁটি, রুয়া, বাটাম তৈরিসহ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাতা দিয়ে পার্টি, চাটাই ও মাদুর হয়। খেজুরের ফল, রস ও গুড় বিক্রি করে প্রচুর আয় করা সম্ভব। শীতের প্রধান আকর্ষণ খেজুরের রস। রস উত্তম পানীয়। রস দিয়ে তৈরি হয় পিঠা, পায়েশ, চিনি, মিছরি, ভিরেগার ও গুড়। প্রচলিত গুড় হল নলের গুড়, চিটা গুড়, দানা গুড়, ঝোলা গুড়, মৌঝোলা গুড় ও পাটালী গুড়। যশোর ও ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।
সারাদেশের সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথের দু’ধারে, জমির আইলে, পতিত ও খাস জমিতে পরিকল্পিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের উন্নতমানের খেজুর বীজ এনে রোপণ করলে পুুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং খেজুরভিত্তিক কুটির শিল্প বিকশিত হবে। ফলে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। এ ব্যাপারে বন বিভাগ, কৃষি বিভাগ উদ্যোগ নিতে পারে। যশোর ও মাগুরায় সৌদি আরবের খেজুর চাষ করে অনেক চাষী লাভবান হচ্ছে। খেজুর গাছ পরিবেশ সুরক্ষা, মাটির ক্ষয় রোধ, পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও নানা রোগের ওষুধ হিসেবে কার্যকরী।
Previous
Next Post »